মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ।



মনোসেক্স তেলাপিয়া তথা যেকোন মাছ চাষের ক্ষেত্রে পানির ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারন পানিই মাছের জীবনধারনের জন্য একমাত্র ও অনন্য মাধ্যম। পানির বিভিন্ন ভৌতরাসায়নিক উপাদান তাই সরাসরি মাছের জীবনচক্রের উপর প্রভাব ফেলে। ঝুঁকিমুক্ত পানির পরিবেশের উপরই মনোসেক্স তেলাপিয়ার উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে পুকুরে পানি দেয়ার প্রধান উৎস হল পার্শ্ববর্তী প্রাকৃতিক জলাশয় অথবা খাল কিন্তু এসব উৎস থেকে পানি উত্তোলন এর ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেযেমন পানি উত্তোলনের সময় পাম্পের সন্মুখে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট নেট এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন ঝুকিপুর্ণ জলজ জীব বা শেওলা; যা তেলাপিয়া মাছকে রোগাক্রান্ত করতে সক্ষম সেগুলোকে আলাদা করতে হবে। এরপর পানিকে জীবানুমুক্ত করার জন্য ব্লিচিং পাউডার ( ডোজঃ ৬০-৭০ পিপিএম ) অথবা মানসম্পন্ন জীবানুনাশক যেমনঃ টিমসেন (ইয়ন), ভাইরুস্নিপ (নোভারটিস), ভাইরেক্স (এসিআই), মাইক্রোবাইট (নিউট্রিহেলথ), ফার্মসেফ (ক্যাটাপল) ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। সাধারনত এসব জীবানুনাশক এর স্বাভাবিক ব্যবহারের মাত্রা হল ৪-৫ গ্রাম/ শতাংশ প্রতি ৩ ফুট গভীরতার জন্য। পানির গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তিত হবে। আলাদাভাবে রিজার্ভ পুকুরের ব্যবস্থা না থাকলে, সেক্ষেত্রে চাষের পুকুরেও সরাসরি পানি  উত্তোলন করে উপরোক্ত উপায়ে পানি জীবানুমুক্ত করা যাবে।    

তবে প্রাথমিক ভাবে এ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ও প্রাকৃতিক খাদ্যের(প্লাঙ্কটন) পরিমান একেবারেই কম থাকে তাই পানিতে প্লাংক্টন উৎপন্ন করার জন্য বাজারে প্রচলিত স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানীর প্লাংক্টন মেকিং বিভিন্ন ঔষধ যেমনঃ লাইভফুড (অ্যাডভান্স এগ্রোটেক), বায়োগ্রো (এস্কাইফ) অথবা সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারনত এসব প্লাংক্টন মেকারের ব্যবহারিক মাত্রা হল ৪০-৫০ গ্রাম/ শতাংশ প্রতি ৩ ফুট গভীরতার জন্য। পানির গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তিত হবে। অন্যদিকে উপরোক্ত প্লাংক্টন তৈরির ঔষধসমূহ যদি সহজলভ্য না হয় অথবা ঔষধের খরচ কিছুটা  কমাতে হলে নিন্মোক্ত উপায়ে সার প্রয়োগের মাধ্যমেও পানিতে স্বাভাবিক মাত্রায় প্লাংক্টন তৈরি করা যায়-  

  
সারের নাম
ব্যবহারের মাত্রা  (গ্রাম/শতক)
গোবর    অথবা
৫-৬
কম্পোষ্ট 
৮-১০
ইউরিয়া
১০০-১৫০
টিএসপি
৭০-৮০

সারের ব্যবহারবিধিঃ
উপরে বর্নিত উপাদানসমূহের মিশ্রন এর তিন থেকে চার গুন পানিতে মিশিয়ে প্রায় ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে, পরে এই মিশ্রন দিনের বেলায় রোদের সময় প্রয়োগ করতে হবে।

সতর্কতাঃ
Ø প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা যাবে না।
Ø বৃষ্টি অথবা মেঘলা দিনে কোনভাবেই সার প্রয়োগ করা যাবে না।
Ø সার ও প্লাংক্টন মেকার একসাথে ব্যবহার করা যাবে না।
 
Previous
Next Post »